মায়া ক্যালেন্ডার
ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ল আজ মহাশূন্যে ভোজসভা। অনুভব করলাম
আমার হাত দুখানি বেজায় লম্বা তথা পা দুটি যুগপৎ ভারী ও দীর্ঘ
সর্বাঙ্গ অসমবয়সি ! কি বলতে কি বললাম : ব্রহ্ম হে মা-ধ-ব
কোথায় আমার ঝুলকালি মাখা মুখ
ঝলসানো নখদন্ত আঙুল কপাল
উরুতময় বালি কুয়াশা বুদবুদ
কোথায় মোচড়ানো নদী ? পুঁইফুল ?
অষ্টমীর চাঁদ ?
তন্দুরচুল্লিতে রাজহাঁস -- আমি চিনি-চর্বি-দুগ্ধ কিছুই খাইনা
কৃষ্ণ এখন মাল্টিডায়মেনশনাল গ্লোবাল -- চাঁদের অদূরে চাঁদ রাত্রিকালীন রাজধানী
ঝাঁক ঝাঁক পৃথিবী। নিকটস্থ হয়েও দূরে চলে যায় উদ্দাম রমনী।
তুমিই তো শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ
না, আমি রবীন্দ্র
ছিলে, আজ তুমি মঙ্গলের মেরুপুরুষ -- আগামীকাল মাকালীর মর্গের প্রহরী হবে
আমাদের ভালবাসা ?
থাকবেনা
আমাদের ক্রোধদৈন্যধর্ষক্ষুধা ?
থাকবেনা
ঈশ্বর-সংক্রান্ত তল্লাশি ধ্বনি-শোক-শূন্যতা আত্মমৈথুন ? কবরমুখী লম্বা নীরবতা
তুমি গাণিতিক মেজাজের কথা ভাবছ। কত কি দেখেছ বল। মঙ্গলের
ধুলোয় সুনীতার ভুল অহংকার তোমাকে কাঁদিয়েছে কি ? জেসিকা লালের মৃত্যুতে তামাম
দিল্লীতে মানুষের অমানুষপনা নিয়ে কেউকি বলেছে জন্ম নিয়ন্ত্রনের কথা ? গুলিটা
কোথায় লেগেছিল জেসিকা লালের ? যোনিপদ্মে ? বুকে ? ত্বকে ? মাংস খুবলোনো
বাতাস এ-শহর আর শহর থাকলনা -- বিধাতার ঘুমন্তচোখে ঝর্ণাফুর্তি -- সবটাই
রূপকথার ধ্বনিধুনন -- হাঁ, অনুশাখা থেকে ফুসফুস ফাঁকা করে দাও, আর চ্যুত
চতুর্দশী ধর্ম প্রেম, আর সমদৈর্ঘের উচ্ছ্বাস, প্রত্যঙ্গের কাটাকুটি ইহকালের মায়া ক্যালেন্ডার
দেহ নেই অস্ত্রপচার নেই, ডেথ ওরফে স্বয়ংমৃত্যু
হর্ষবর্ধন, তুমিই তো বলেছিলে সে-সে আমি-আমি
শুয়োরের খোঁয়াড় সংসদভবন
এখন মুখের অর্ধেকটা রাজধানী চাঁদের দিকে
বাকি অর্ধেকটা ঝুলন্ত ব্রিজ
যিশু জুডাস কৃষ্ণ বস্তুত লুট নয় এস মোহর কুড়োই
আসলে মেধামস্তক হাত নয় হাতই মস্তক -- আমাদের ঘিরে
অজস্র রাস্তা, রাস্তার দুপাশে রাস্তা, অনাচ-কানাচ ঘিরে রাস্তার ওপারে রাস্তা।
যুবকের শহর
রক্তে আলোকিত মুখ - বাড়ির সামনেই বাড়ি অথচ নামনম্বর মনে
পড়ছেনা - উত্পীড়িত শরীর থেকে খুলে ফেল্লুম প্রেমিকার দেয়া
বাঘছাল - অনেক তো হল ইঁদুরগর্তে লর্ডশিপ খেলা লজ্জাপত্র নিয়ে,
জ্বলনশীলার বুকের শেকলে কাটামুণ্ডু উড়োমানুষের কপালে রোদ্দুরকণা
ধর্ষনান্তের সময় নির্ণয় করে খরন্যাংটো বৃষণিসুন্দরী ক্রোধশিল্পের কথা
বলল : লর্ডশিপ চালিয়ে সবাইকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছ তুমি--
শূণ্য বিছনা যোনিকুসুম ছেঁড়া, এখন কি যা ইচ্ছে তাই করা সম্ভব ? মিথ্যাদিন,
অভিমানী ঊরু ঘিরে রুগ্ন দুপুরের কিমাকার হাওয়া, মিথ্যারাত
জ্বলনশীলা, তোমার দ্বন্দ্বঘৃণায় আছি নিশ্চুপ ভুলঠিকানায় আধন্যাংটো
দ্রোণর শহরে ছোবলে জর্জর
রাত বারোটার কোল্কাতার গাটারে মাছি
আত্মার ভিতর শয়ে শয়ে দীনাত্মা -- সদানত, বয়স্কা জননীর অনিঃশেষ দিন,
ভুলতে পারেননা কন্যাবস্থার কলঙ্ক -- ইহ ভুল, কুন্তির এই ভ্রান্তি ! একরাশ
বুকভরা বালিক্ষার আর ষড়যন্ত্রের বায়ুগুচ্ছ দুর্যোধনের দুঃখ
শূণ্যতার স্পর্শে শূণ্যতা, বুক অব্দি এই শহরের ধ্বনি, আর হ্যাঁ
রক্তে আলোকিত যুবকের মুখ।
যুবকের রাত
কোন কোন রাতে চাঁদ যেন চিতাচুল্লির মত, সারারাত ঘুম আসেনা ঘরময় হাঁটাহাটি
করি। জীর্ণ জানালার কাছে যাই, দেয়াল কার্নিশে গিয়ে বসি -- মধ্যরাতে
খোলা থাকে গান্ধারীর চোখ -- শহরের পথে দাপিয়ে ছোটে বিনোদিনীর
রথ -- লীলার নিমিত্ত লীলা, প্রতিলীলা সুখ ও আনন্দ সংক্রান্ত। বিনোদিনীর
আঁচল জড়িয়ে যায় রাতের শূন্যতায়
অহিতুণডিক যুবকের ঘটনা-বেত্তান্ত শুনে
আইবুড়ো বন্ধু বলল: জিন্দালাশ
যুবতীর আঁচলে মীনপুচ্ছ সাপ
যুবকের রাত মানেই যন্ত্রণা -- দস্তানার আড়ালে অনন্ত বিষাদ
এরকম হয় ঠিকঠাক কিছুই ঘটেনা। ফাতনা নাচানো ভঙ্গিতে
'ধ্যুত' বলে কে একজন তর্জনি নাড়ল -- শূন্যে একাধিক ছবি আঁকলো, বলল :
জীবনের পুঁথিপাণ্ডুলিপির তিক্ততা বাছাই কোরনা
নাও, সিগার ধরাও --
বুকের বীজক্ষেত্র থেকে রুহিতমা দাগদুগ সহস্রপরত
ধোঁয়ার সাথে উড়িয়ে দাও --
মধ্যরাতে দাপিয়ে মরুক লীলার নিমিত্ত লীলা, প্রতিলীলা
সে সিগার ধরাল, নাক কুঁচকালো, ভুরু নাচিয়ে বলল:
পাতাফুল তোলা বিনোদিনীর আঁচলতলে বর্তুলচাঁদ
যা হবার হয়েছে, এসো
এবার সুখ ও আনন্দ সংক্রান্ত
কিছু কথা বলা যাক --
পানপাত্রে এত বিষাদের গন্ধ কেন ?
বাতাসে আঁকিবুকি বার্তা ছড়ায় অতিরিক্ত ছোবলায় বুক
বিনোদিনীর রথ চলে যায় --
শূন্যতার মরণফাঁদে পা, সারারাত ঘুম আসেনা, ঘরময় হাঁটাহাটি করি,
দেয়াল কার্নিশে গিয়ে বসি
যুবকের রাত মানেই যন্ত্রণা --
এরকম হয় , ঠিকঠাক কিছুই ঘটেনা।